ঢাকাবুধবার , ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

কুশিয়ারার পানিবণ্টন: চাষের আওতায় আসবে ১০ হাজার হেক্টর জমি

স্টাফ রিপোর্টার
সেপ্টেম্বর ৭, ২০২২ ১০:৪২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন চুক্তির ফলে আশার আলো দেখছেন সিলেটের তিন উপজেলার মানুষ। এতে অন্তত ১০ হাজার ৬০০ হেক্টর জমি চাষের আওতায় আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে পাউবো ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সেচের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে অনাবাদি অবস্থায় পড়ে আছে জেলার জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও কানাইঘাট উপজেলার বিস্তীর্ণ জমি।

বর্তমানে ভারত সফরে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত মঙ্গলবার দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরে সাতটি সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ভারত ও বাংলাদেশ। এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের আওতায় কুশিয়ার নদী থেকে বাংলাদেশ কর্তৃক ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহার চুক্তি।

ভারতের বরাক নদী সিলেটের জকিগঞ্জের অমলসীদ দিয়ে প্রবেশ করে সুরমা ও কুশিয়ারায় বিভক্ত হয়েছে। কুশিয়ারার উৎসমুখ থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে শরীফগঞ্জ বাজার। এই বাজারের কাছেই কুশিয়ারা নদী থেকে উৎপত্তি রহিমপুর খালের। প্রায় আট কিলোমিটার দীর্ঘ এ প্রাকৃতিক খাল থেকে উৎপত্তি হয়েছে আরও অসংখ্য খালের। আশপাশের এলাকার কৃষকদের সেচের প্রধান উৎস এই খাল। তবে বর্ষায়ও তেমন পানি থাকে না খালগুলোতে। আর শুষ্ক মৌসুমে পুরো শুকিয়ে যায়।

টানা বৃষ্টি আর ঢলের কারণে সিলেটের নদনদীগুলো এখন পানিতে টইটম্বুর। তবে মঙ্গলবার জকিঞ্জের শরীফগঞ্জ বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রহিমপুর খালে হাঁটু পানি। হেঁটেই এই খাল পারাপার হচ্ছেন স্থানীয়রা।

খালের এই পানি শূন্যতার দৃশ্য দেখিয়ে স্থানীয় বারগাত্তা গ্রামের খলিলুর রহমান বলেন, শুষ্ক মৌসুমে যখন খাল শুকিয়ে যায়, তখন পুরো গ্রাম শুকিয়ে যায়। গ্রামের পুকুরেও পানি থাকে না। জকিগঞ্জ একসময় সুপারির জন্য বিখ্যাত হলেও শুকনো মৌসুমে সুপারি গাছও মরে যায়।

স্থানীয়দের দাবি, শুষ্ক মৌসুমে পুরো শুকিয়ে যায় রহিমপুরসহ আশপাশের খালগুলো। ফলে বোরো ও আমন মৌসুমে সেচের অভাবে এসব খালের পাশের জমিতে চাষাবাদ করা যায় না। পানিবণ্টন চুক্তির ফলে জমিগুলো ফসলে ভরে উঠবে বলে মনে করেন তারা। জকিগঞ্জ, কানাইঘাট ও বিয়ানীবাজার উপজেলার চাষাবাদে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে বলে মত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উৎসমুখে কুশিয়ারা নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় কয়েক যুগ ধরে রহিমপুর খাল শুকনো মৌসুমে পানিশূন্য হয়ে পড়ে। ফলে ১০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে রবিশস্য ও আরও বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চলে বোরো ধানের চাষাবাদ সম্ভব হয় না।

এসব জমিকে চাষের আওতায় আনতে ‘আপার সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্প’-এর অধীনে ২০১০ সালে ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রহিমপুর খালের উৎসমুখে একটি পাম্প হাউস নির্মাণ ও রহিমপুরসহ আশপাশের কিছু খালের উন্নয়ন কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এর আগে প্রকল্পের সুবিধার্থে ২০০৯ সালে কুশিয়ারা নদীর পাড়ে খালের উৎসমুখে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ২০১৬ সালে খাল উন্নয়ন ও পাম্প হাউসের নির্মাণকাজ শেষ করে পাউবো।

জকিগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শেখ ফরিদ বলেন, রহিমপুর খাল দিয়ে কুশিয়ারা নদীর পানি প্রত্যাহার করার মাধ্যমে শুকনো মৌসুমে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে লক্ষাধিক মানুষ উপকৃত হবেন।

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, সব আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে বাঁধ অপসারণ ও পাম্প হাউস চালু করতে পারলে আগামী শুকনো মৌসুমেই এলাকাবাসী উপকৃত হবেন।

পানিবণ্টন চুক্তির পর সেচ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জকিগঞ্জের পাশাপাশি বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার চাষিরাও উপকৃত হবেন বলে জানিয়েছেন জকিগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফয়সাল।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আমারনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন aamarnews.bd@gmail.com ঠিকানায়।